পরিচিতি
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হোসেন বাঁশি
নূরুল হোসেন ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলাধীন লক্ষ্মীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম মরহুম আলহাজ্ব আব্দুর রহমান মিয়া এবং মাতা মরহুমা মেহেরুন্নেছা । প্রমত্তা যমুনার করাল গ্রাসে লক্ষ্মীপুর গ্রামটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় তাঁর পিতা পরবর্তীতে বেড়া উপজেলার নাটিয়া বাড়িতে বসতি স্থাপন করেন । এখানে কেটেছে তার কৈশোর ও যৌবনের দুরন্ত দিনগুলো । তাঁরা ছিলেন চার ভাই ও তিন বোন । ভাই- বোনদের মধ্যে তৃতীয় আর ভাইদের মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয় । তার ডাক নাম ছিল বাঁশি। তিনি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ক্লাস সেভেন থেকেই তিনি ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে পারতেন। ধোবাখোলা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় নাটিয়াবাড়ী থেকে তিনি 1969 সালে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন । তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় খুব অগ্রসর ছিলেন। ব্যাডমিন্টন, হকি ও ফুটবল সহ বিভিন্ন খেলায় খুব পারদর্শী ছিলেন ।এসএসসি পাশ করে তিনি ভর্তি হন ঢাকা কলেজে । এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত থাকা অবস্থায় ৭ নম্বর সেক্টরে মতিউর রহমান মতি কমান্ডারের অধীনে তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। এই দলে মুক্তিবাহিনী সদস্য ছিলেন ৭২ জন। তাঁরা দেশ মাতৃকাকে রক্ষার জন্য হানাদার বাহিনীকে রুখে দিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন । ১৯৭১ সালের ৫ অক্টোবর মধ্যরাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আব্দালপুর ইউনিয়নের পিয়ারপুর গ্রামে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁরা সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণরা। প্রিয় স্বদেশকে মুক্ত করতে তারা প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যান। এই যুদ্ধে 11 জন বীর মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এম্বুসে পড়ে মারা যান । তার মধ্যে চারজনের লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল ।তারা হলেন.
১.শহীদ জাফর আলী পাইকান্দি।
২. শহীদ নূরুল হোসেন বাশি, লক্ষীপুর (পরবর্তী ঠিকানা নাটিয়াবাড়ী)।
৩. শহীদ ননী গোপাল (কুশিলাল) ভুলন্দর ।
৪.শহীদ নাজিমুদ্দিন (মানিক) ঘোপশীলেন্দা ।
রণাঙ্গনে শাহাদাত বরণকারী এ চার জন পিয়ারপুর গ্রামের পবিত্র মাটিতে চিরনিদ্রায় সায়িত রয়েছেন । ১৯৭২ সালে তৎকালীন উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত নগরবাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে কাশিনাথপুরে যখন কলেজটি স্থাপিত হয় তখন এই এলাকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হোসেনের নামে এর (শহীদ নূরুল হোসেন ডিগ্রী কলেজ) নামকরণ করা হয় ।উল্লেখ্য কলেজ প্রতিষ্ঠার অগ্রণী সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে শহীদ নূরুল হোসেনের নামে এ প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করার প্রস্তাব করেন ।শহীদ নূরুল হোসেনের পিতা নাটিয়াবাড়ির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান মিয়া প্রতিষ্ঠা লগ্নে নগদ ২৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন । শহীদ নূরূল হোসেন যেমন দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে অমর হয়ে আছেন তেমনি তাঁর পরিবারও এ এলাকার শিক্ষা ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন।